রাজশাহীতে নকল হেরোইন ও ফেনসিডিলের বোতলে পানি ভরে মাদকের মামলা

রাজশাহীতে নকল হেরোইন ও ফেনসিডিলের বোতলে পানি ভরে মাদকের মামলা

রাজশাহীতে নকল হেরোইন ও ফেনসিডিলের বোতলে পানি ভরে মাদকের মামলা
ফাইর ফটো

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী চারঘাটের কুখ্যাত মাদক কারবারী আলিম কালু। বাড়িতেই রয়েছে তার হেরোইন তৈরির কারখানা! তবে হ্যা সে হেরোইনগুলো সম্পূর্ণ নকল। তৈরি করছে মেডি পাওডার ও পান খাওয়া খয়ের দিয়ে। প্যাকেটের গায়ে ব্যবহার হচ্ছে টিউবয়েল মার্কা ট্রেডমার্ক। ওজন দেয়া অত্যাধনিক মেশিনও রয়েছে তার কারখানায়। আর এসকল যন্ত্র আমদানী করেছেন পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে। পুলিশ এবং র‌্যাবের সোর্স পরিচয়ে দাপটের সাথে মাদকের একক বিস্তার ঘটিয়েছেন চারঘাট এলাকায়। একসময়ের ইট ভাটার লেবার ছিলেন তিনি। এখন হয়েছেন বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক। প্রশাসনের সাথে সুসম্পর্ক ও এলাকায় প্রভাব বিস্তার থাকায় করছেন ইউপি নির্বাচন। মেম্বার পদে করছেন ভোট।

রাজশাহী জেলা ও মহানগর এলাকায় বছরের বারো মাসই ঘটা করেই অভিযান চালায় পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। বগুড়া এপিবিএনের সদস্যরাও রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় চালাচ্ছে অভিযান, সড়কে চৌকি ফেলে করছে তল্লাশি। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে রাজশাহীতে মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার হয়েছে। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতিটা ঠিক তার উল্টো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আলিম কালুর এক সহযোগী  তিনি জানান, মাস তিনয়েক আগে বগুড়ার আমর্ড পুলিশ ব্যাটেলিয়নের একটি টিম তাকে ভোর ৫টার দিকে তার বাড়ির ছাদে জিআই পাইপের ভেতর থাকা ইয়াবা ও হেরোইন জব্দ করে। এ ঘটনায় তাকে সে সময় গ্রেফতারও করে এপিবিএন এর সদস্যরা। পরে তিন লক্ষ ৫০ হাজর টাকার বিনিময়ে মুক্তি মেলে তার।

তিনি আরো বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক সদস্য তাদের জব্দকৃত মাদক আলিম কালুর নিকট সরবরাহ করে। সম্প্রতি মাস দেড়েক পূর্বে কালুর নিকট ইয়াবা ও হেরোইন বিক্রি করেছেন ওই সদস্য।

এদিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. জাফরুল্লাহ কাজল বলেন, ‘আলিম কালুর বিরুদ্ধে একাধিক মামলার ডাটাবেইজে রয়েছে আমাদের কাছে। তার মাদক সংশ্লিষ্টতা থাকলে তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। এছাড়াও তার সাথে যদি আমাদের কোন সদস্য যুক্ত থাকলে তার বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।’

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে চারটি উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এসব অভিযান করা হয়ে থাকে।

অভিযানের অন্যতম উদ্দেশ্যই থাকে মাদক ব্যবসায়ীদের জানান দিয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগের ইঙ্গিত করা। দ্বিতীয় উদ্দেশ্য হল এসব অভিযানে আটক বা জব্দ হওয়া হেরোইন ইয়াবা ও ফেনসিডিল আটকের পর গায়েব করে দিয়ে পুনরায় মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেয়া।

তৃতীয় উদ্দেশ্য হল আটক বা জব্দ মাদকের সঙ্গে আটক ব্যক্তির (অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাহক বা কামলা) স্বীকারোক্তির কথা বলে বড় বড় মাদক ব্যবসায়ীদের ফোন করে জানানো যে আটক ব্যক্তি জানিয়েছে যে সে আটক মালের মালিক। মালের মালিক হিসেবে তাকে পলাতক আসামি করা হবে। এক্ষেত্রে নাম বাদ দেয়ার জন্য হাঁকা হয় বিপুল অঙ্কের টাকা। টাকা না দিলে পলাতক আসামি করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বড় মাদক ব্যবসায়ীরা টাকা দিয়ে পুলিশের সঙ্গে সমঝোতা করে। এক্ষেত্রে পুলিশ আটক ব্যক্তির সঙ্গে জব্দ করা হেরোইন বদল করে নকল হেরোইন দিয়ে আদালতে নমুনা পাঠায়। ফলে কেমিক্যাল পরীক্ষায় আটক মাদক নকল বলে প্রমাণিত হয়। এতে মাদকের মামলাটিতে আটক ব্যক্তিরও কোনো শাস্তি হয় না।

চতুর্থ উদ্দেশ্য হল নকল হেরোইন, ইয়াবা ও ফেনসিডিলের বোতলে পানি ভরে নকল মাদক দিয়ে মামলা দেখানো যাতে সংশ্লিষ্ট বিভাগসহ জনসাধারণ মনে করতে পারে মাদকবিরোধী অভিযান সফল হচ্ছে। নির্ভর যোগ্য সুত্র বলছে, আলিম কালুর সাথে প্রশাসনের গুটি কয়েক সদস্যর পরস্পর যোগসাজশে ধরা হেরোইনগুলি পরিবর্তন করছেন।

অন্যদিকে চারঘাট ও পুঠিয়া এলাকায় হেরোইনের যেসকল চালান ধরা পড়ে তার অধিকাংশই নকল। আলিম কালু  কাছ থেকে নকল হেরোইন নিয়ে পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ পরিত্যক্ত মাদক দেখিয়ে একাধিক মামলা রেকর্ড করেন যাতে কোনো আসামির নাম নেই। আবার কিছু কিছু খেত্রে আলিম নিজেই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদে নকল হেরোইন দিয়ে ফিটিং মামলা করাচ্ছে। এমন ঘটনা অহরহ ঘটে চলেছে পুঠিয়া ও চারঘাট এলাকায়।

এবিষয়ে পুলিশের চারঘাট সার্কেলের এসপি প্রণব কুমার বলেন, ‘আমি নতুন জয়েন করেছি। তাকে আমি চিনি না। তার বিষয়ে খোজখবর নেওয়া হবে। এছাড়াও কেউ যদি আলিম কালুর বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেন তবে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে এ্যাকশন নেওয়া হবে।

মতিহার বার্তা / ইএবি

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply